শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৭ অপরাহ্ন
জামালপুর প্রতিনিধিঃ বাজারে ভালো দাম পেয়ে খুশি জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার পাট চাষীরা। তবে খালে বিলে পানি না থাকায় কারণে পাট গাছ জাগ দিতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে চাষীদের। সরেজমিনে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ঝালুরচর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ঝালুরচর বাজারটি যমুনার একটি শাখা নদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত। বাজারের পূর্ব পাশে দেওয়ানগঞ্জ সানন্দবাড়ী সড়ক। দেওয়ানগঞ্জ শহর থেকে ঝালুরচর বাজারের পাট হাটে যেতে সড়কের দুই পাশে ডোবা নালায় চোখে পড়ে পাট গাছের জাগ। আবার অনেক জায়গায় সড়কের দুই পাশে নারী ও পুরুষ মিলে পাট শুকানোর কাজ ব্যস্ত দেখা যায়। এ অঞ্চলের পাট চাষীরা পাট বিক্রি করতে আসে ঝালুরচর বাজারে। এ বাজারে আসা সোনালী রঙের পাট দেখে মনে হয় পাট সত্যি সোনালী আঁশ। ঝালুরচর বাজারটি নদীর তীরবর্তী হওয়ায় অনেক পাট চাষী নৌকায় করে সোনালী রঙের পাট নিয়ে আসে। আবার অনেকে অটো রিকশা, ভ্যান, ভটভটি দিয়ে পাট নিয়ে আসে।
নদীতে যেমন সারি সারি পাটের নৌকা, তেমন সড়কে সারি সারি পাটের অটো রিকশা, ভ্যান, ভটভটি দেখা যায়। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় পাট চাষ হয়েছে চোখে পড়ার মত। পাট চাষে পরিশ্রম কম এবং খরচ কম। বাজারে পাটের ভাল দাম পাওয়ায় পাট চাষে আগ্রহ বাড়ছে । তবে বন্যা ও বৃষ্টি কম থাকায় পাট গাছ জাগ দিতে কিছুটা বিপাকে পড়েছে পাট চাষীরা। পাট চাষীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পাট চাষ করে তিন মাসের মধ্য পাট ঘরে তোলা যায়। কম সময়ে, কম পরিশ্রমের ফসল পাট। প্রতি বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে ৮হাজার থেকে ১০হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতি বিঘা জমিতে ১০-১২মণ পাট পাওয়া যায়। এবার বাজারে পাটের মান ভেদে বিক্রি হচ্ছে ২হাজার ৬শ থেকে ৩হাজার টাকা পর্যন্ত। এবার বন্যা না হওয়ায় পাট চাষীদের পাটের কোন ক্ষতি হয়নি। পাট চাষের খরচ বাদ দিলে ভাল লাভের আশা করছেন পাট চাষীর। পাটের ভাল ফলন ও বাজারে ভাল দাম পাওয়ায় খুশি ঝালুরচর বাজারে পাট বিক্রি করতে আসা পাট চাষীরা। হাট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার অর্থাৎ সপ্তাহে দুই দিন ঝালুরচর বাজারে হাট বসে।এ হাটে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ও গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন এলাকার পাট চাষীরা পাট বিক্রি করতে আসে। পাটের মান ভাল হওয়ায় বিভিন্ন জেলার পাট ব্যবসায়ীরা এ অঞ্চলের পাট কিনতে আসে। হাটে প্রায় ৫শতাধিক পাট চাষী পাট বিক্রি করতে আসে। প্রতি হাটে আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার মণ পাট বিক্রি হয়ে থাকে। মান ভেদে ২হাজার ৬শ থেকে ৩হাজার টাকায় পাট বিক্রি হচ্ছে। কম পরিশ্রম, কম খরচে বেশি লাভের ফসল পাট। অন্য ফসলে তুলনায় পাট চাষ করে বেশি লাভবান হচ্ছে পাট চাষীরা। গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলার হরিচন্ডী এলাকার পাট চাষী হাফেজ মিজানুর রহমান জানান, তিনি ২বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন। এতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ২০হাজার টাকা। ২বিঘা জমিতে প্রায় ২৪মণ পাট হয়েছে। তিনি সেই পাট নৌকায় করে বাজারে নিয়ে এসেছেন। প্রতি মণ পাট ২হাজার ৮শ টাকা দরে বিক্রি করেছে তিনি। এতে তার অনেক লাভ হয়েছে। কম খরচে, কম পরিশ্রমে বেশী লাভ হওয়ায় খুব খুশি তিনি। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের দপরপাড়া এলাকার পাট চাষী আবুল কাশেম জানান, সোয়া ২বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে তার খরচ হয়েছে ১৫হাজার টাকা। ওই জমিতে ১৮মন পাট হয়েছে। প্রতি মন ২৯০০টাকা দরে বিক্রি করছে। এতে তার খরচ বাদে ৩৭হাজার ২শ টাকা লাভ হয়েছে। পাট বিক্রি করে খুব খুশি তিনি। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের কান্দিরগ্রাম এলাকার পাট চাষী মো.আব্দুল করিম জানান, এবার পাটের ভাল ফলন হয়েছে। বাজারে পাটের দামও ভাল। তবে পানি না থাকায় পাট গাছ জাগ দিতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে আমাদের। পানি থাকলে পাটের মান আরো ভাল হতো। বাজারে পাটের আমদানীও বাড়তো।
উপজেলার ঝালুরচর বাজারের পাট ব্যবসায়ী শহির আলী জানান, এ অঞ্চলের পাটের মান ভাল। আমদানীও ভাল। বাজারে পারিপার্শ্বিক কোন ঝামেলা নেই। তবে নদীর ভাঙ্গনের কারনে পাটের হাটের অংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। জায়গা সঙ্কটের কারনে চাটি বসিয়ে পাট কেনা বেচায় সমস্যা হচ্ছে। ভাঙ্গনরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নিলে এ সঙ্কট কেটে যাবে। নদীর ভাঙ্গনরোধে স্থায়ী ব্যবস্থার দাবী জানান তিনি। ঝালুরচর বাজারের পাট ব্যবসায়ী লিটন জানান, গত বছর পাট কিনে রাখছিলাম। ভাল লাভ পেয়েছি। এবারো পাট কিনে রাখতেছি। ভাল লাভ হবে বলে তিনি আশা করেন। রাজীবপুরের পাট ব্যবসায়ী জানান, পাটের বাজার বেশি হওয়ায় কৃষক লাভবান। তবে ব্যবসায়ীদের পাট মিল কারখানায় বিক্রি করতে সমস্যা হচ্ছে। অনেক পাটের মিল বন্ধ রয়েছে। মিল কারখানা খুললে সমস্যা কেটে যাবে। এ অঞ্চলের পাট ঢাকা,নারায়নগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ দেশে বিভিন্ন মিল কারখানায় বিক্রি হয়ে থাকে। ঝালুরচর বাজারের সাব ইজারাদার মো.উজ্জল মিয়া জানান, পাটের হাটে ক্রেতা বিক্রেতা ভালই আসে। এ অঞ্চলের পাটের মান ভাল হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ পাট কিনতে আসে। প্রতি হাটে প্রায় ১কোটি টাকার পাট কেনা-বেচা হয়ে থাকে। পাটের হাটে জায়গার সঙ্কটের কারনে পাট কেনা-বেচায় সাময়িক সমস্যা হচ্ছে।